সম্পত্তি কে পাবে ?, কে বঞ্চিত হবে ?

মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি কে পাবে আর কে বঞ্চিত হবে, বঞ্চিত হওয়ার কারণগুলো কি, ত্যাজ্য পুত্র-কন্যাদের সম্পত্তি প্রাপ্তিতে আইনী বাধা, নারীদের সম্পত্তিতে অংশ বিষয়ক আইনী আলোচনা নিয়ে আজকের নিবন্ধ ।

 

ইসলামে সম্পত্তির সুষ্ঠু নীতিমালাঃ

কোন প্রেক্ষাপটে কী কী কারণে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে ওয়ারিশদেরকে বঞ্চিত করা যাবে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে।

 ১। পুত্র যদি পিতাকে অথবা যে কোন উত্তরাধিকারী যদি সম্পত্তির মালিককে ইচছাকৃত বা ভুলবশত হত্যা করে তবে হত্যাকারী নিহতের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পাবে না;

২। একজন মুসলিম কোন অমুসলিমের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পাবে না;

৩। ইসলাম ত্যাগকারী, মুরতাদ হয়ে গেলে সে তার মুসলিম আত্মীয়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে;

৪। মৃত্যুর সময় তথা কে আগে বা কে পরে মারা গিয়েছে তার সঠিক তথ্য জানা না থাকাও উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ। যেমন জাহাজ ডুবি অথবা কোন দালান হতে পড়ে বহু লোক একত্রে মারা গেল। এমতাবস্থায় নিহত ব্যক্তিগণ একজন অপরজনের সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে। এখানে মনে করতে হবে সকলেই একসংগে মারা গিয়েছে। সুতরাং তাদের সম্পত্তি জীবিত উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ফারায়েজ মোতাবেক বন্টিত হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, স্বধর্ম ত্যাগ না করে ভিন্ন ধর্মের কাউকে বিয়ে করলে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। একইভাবে সৎ বাবা বা সৎ মা, সৎ ছেলে-মেয়েরা সম্পত্তি পায় না। অনুরুপভাবে মুসলিম সন্তানও তার বিধর্মী পিতামাতার উত্তরাধিকার পাবে না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারও সম্পত্তি পাবে না। জারজ সন্তান পিতার উত্তরাধিকারী হয় না, কিন্তু তার মা ও মায়ের আত্মীয়দের থেকে সম্পত্তি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পাবে (মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে)।

শরিয়া আইনে শারীরিক কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে কাউকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই। তবে মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেহেতু তার সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করার সক্ষমতা রাখে না, তাই তার সম্পত্তি তার কল্যাণে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে একজন অভিভাবক নিযুক্ত করার বিধান রয়েছে। আদালতের মধ্য দিয়ে এই অভিভাবক নিযুক্ত করা যায়। ইসলামী আইনে যেহেতু দত্তক সন্তান গ্রহণের বিধান নেই। কাজেই দত্তক সন্তান উত্তরাধিকার পাবে না। তবে সম্পদের মালিক যে কেউ তার অধীনে থাকা পোষ্য বা পালিত সন্তানের নিরাপত্তায় জীবিতাবস্থায় সম্পদ দান করতে পারেন; এমনকি সব সম্পদও। সম্পদ কেনার সময়েই পোষ্যর নামে কিনতে পারেন।

ত্যাজ্যপুত্র একটি ভ্রান্ত ধারণা, যা বাংলাদেশের কোনো আইনে কিংবা বিধিতে উল্লেখ নেই। কাজেই সন্তানদের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে পিতা মাতা কোর্টে গিয়ে

নোটারী পাবলিকের সামনে ২০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা দিয়ে সকল প্রকার সম্পর্ক ছেদ ও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণাকে অনেক ত্যাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরকম ঘোষণা দেয়ায় পিতার মৃত্যুর পর অন্য উত্তরাধিকারিরা সম্পত্তি বণ্টনের সময় পক্ষপাতমূলক বা ভুল সিদ্ধান্ত দিতে দেখা যায়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ১৮৯৩ সালের বাটোয়ারা আইনে কোর্ট ফি দিয়ে দেওয়ানি আদালতে বাটোয়ারা মামলা করা সম্পত্তির অধিকার ফিরে পেতে পারেন ।

মৃত ব্যক্তির কোনো উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তা তিনি জীবিতকালে কাউকে না দেওয়ার ব্যবস্থা করে গেলে সরকার তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে। ইসলামী আইনে কোনো মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। ১. মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফনকাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে। ২. জীবিত থাকা অবস্থায় কোনো ধারদেনা করে থাকলে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে। ৩. তার স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুন না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হবে। ৪. মৃত ব্যক্তি কোনো উইল বা অসিয়ত করে গেলে তা পালন করতে হবে ।

১৮৮২ সলের Married Women’s Property Act.-এর আগে ব্রিটিশ আইনে নারীর সম্পত্তিতে কোনো অধিকার ছিল না। বিবাহের আগে নারীর উপার্জিত সম্পদের মালিকানা বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই চলে যেত তাঁর স্বামীর হাতে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। কিন্তু কেবল কন্যা যদি দুইয়ের অধিক থাকে, তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ। আর মাত্র একজন কন্যা থাকলে তার জন্য (পুরো সম্পদের) অর্ধাংশ…। এটা আল্লাহর নির্ধারিত অংশ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১)। একটু চিন্তা করলে দেখা যায়, কোনো নারী যদি বাবার সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ যথানিয়মে পেয়ে যায়, স্বামীও যদি যথাসময়ে দেনমোহর পরিশোধ করে, স্বামীর সম্পত্তি থেকে প্রাপ্য অংশও যদি বিধবা স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেয়া হয়, তাহলে একজন নারী বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হবেন ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x