ভ্রম সংশোধনী দলিল কিভাবে করবেন ?

আপনি দলিল রেজিষ্ট্রির পর দেখলেন দলিলে দাগ ভূল, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বানানে কোন প্রকার ভুল ধরা পড়লে ভ্রম সংশোধনী দলিল করে নেয়া যেতে পারে।

শুরুতেই নামের প্রসঙ্গে আসি। শুধু জমির দলিলে নয়। যেকোনো কারণে নাম পরিবর্তন বা নামের সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে। কিংবা আপনি চাইছেন আপনি যে নামে কাগজে-কলমে এত দিন পরিচিত হয়ে আসছেন, ওই নামে আর পরিচিত হবেন না। নামটি পরিবর্তন করবেন। এ জন্য আপনার সব সনদপত্র, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম পরিবর্তন করতে চান। আর এই কাজে সবচেয়ে জরুরি ও বাধ্যতামূলক হচ্ছে হলফনামা সম্পাদন করা।

যদি সরাসরি কোন নোটারী পাবলিক আইনজীবীর মাধ্যমে আপনার পূর্ণ নাম-ঠিকানাসহ বাবা এবং মায়ের নাম, জাতীয়তা, বয়স, পেশা, ধর্ম ইত্যাদি উল্লেখ করে একটি হলফনামা সম্পাদন করুন। আপনি কী বিষয়ে হলফ করছেন, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ কিন্তু দিতে হবে। আর নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আগের নাম কী ছিল এবং বর্তমান নামে কী সংশোধন হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে বলতে হবে। এর সঙ্গে কোন সনদপত্রে, পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রে হলফনামা সম্পাদনের পর থেকে কী নাম ব্যবহার করা হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে হলফনামায় উল্লেখ থাকতে হবে। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই হলফনামা করার পর দৈনিক পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।

 

আর মনে রাখতে হবে অবশ্যই হলফকারীকে হলফনামার সঙ্গে পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি দিতে হবে । হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। হলফনামা সম্পাদন করতে হয় ২০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। নাম পরিবর্তনের হলফনামা করে দিলেই সব প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে আপনার নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে তা বলা যাবে না। হলফনামাটি হচ্ছে আপনি যে নাম পরিবর্তন বা সংশোধন করেছেন, তা ঘোষণা দেওয়া এবং পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তা জানান দেওয়া ।

 

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র কিছু নিয়মকানুন আছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে হলফনামা দিয়ে নাম পরিবর্তন প্রযোজ্য হয় না। তবে আপনি সনদপত্র বা দলিলে নাম পরিবর্তন করতে চাইলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের সঙ্গে হলফনামার কপি সংযুক্ত করে দিতে হবে।

 

এখন আমাদের মূল আলোচনা বিষয় দলিল রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান বা নামের ছোট-খাটো কোন ভুল ধরা পড়লে এবং যে ভুল সংশোধন করলে দলিলের মূল কাঠামো বা স্বত্বের কোন পরিবর্তন ঘটবে না সেরুপ ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে আবেদন করা যাবে। সাব-রেজিস্ট্রার এই ধরনের ছোট-খাটো ভুল সংশোধন করতে পারেন। এটাকে ভ্রম সংশোধনী দলিল বলা হয়। রেজিস্ট্রেশন বিধিমালার ৭৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোন রেজিস্ট্রিকৃত বা রেজিস্ট্রেশনের জন্য

গৃহীত দলিলে ভুল-ত্রুটি থাকলে এবং তা সংশোধনের জন্য কোন সম্পূরক দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য, উক্ত ভুল-ত্রুটি প্রমাণের জন্য মূল দলিল বা অবিকল নকল সহ, দাখিল করা হলে, যে রেজিস্টার বহিতে মূল দলিলটি নকল করা হয়েছে তার মার্জিনে এইরূপ সংশোধনের বিষয়ে সাব-রেজিষ্টার একটি টীকা লিখবেন যে, এই দলিলটি অমুক কার্যালয়ের এতো সনের এতো নং দলিল মূলে সংশোধন করা হইয়াছে।” রেজিস্ট্রেশন বিধিমালার ৭৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে, যে রেজিস্টার বহিতে মূল দলিলটি নকল করা হয়েছে, তা যদি সদর রেকর্ড রুমে প্রেরিত হয়ে থাকে, তাহলে যে সাব-রেজিস্ট্রার ভ্রম সংশোধন দলিলটি রেজিস্ট্রি করেছেন, তিনি জেলা রেজিস্ট্রারকে তার নিজ স্বাক্ষরে সংশোধনী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় টীকা যথাযথ রেজিস্টার বহিতে লেখার জন্য অনুরোধ করে পত্র লিখবেন।

 

এখন জানার দরকার ভ্রম সংশোধন দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ কত হবে । রেজিস্ট্রেশন ফি মাত্র ১০০ টাকা, স্টাম্প শুল্ক দিতে হবে ৩০০ টাকা। সেই সাথে ২০০ টাকার স্টাম্পে হলফনামা। আর রয়েছে এন- ফি। বাংলায় প্রতি ৩০০ (তিন শত) শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১৬ টাকা। আর ইংরেজি ভাষা হলে ২৪ টাকা। স্টাম্প শুল্ক মওকুফ চাইলে জন্য স্ট্যাম্প আইন, ১৮৯৯ এর ১৬ ধারা মোতাবেক ২০ টাকার কোর্টফি সহ আবেদন করতে হবে। তাহলে হয়ে যাবে ভ্রমসংশোধনী।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x