চুক্তি কি, কারা কারা চুক্তি করতে পারে আর কারা কারা চুক্তি করতে পারে না, চুক্তি ভঙ্গ করলে কি হবে, কোন চুক্তি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক আর কোন চুক্তি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয় এসকল বিষয়-আইনী আলোচনা জানুন ৷ চুক্তি সম্পর্কিত আইন
বাংলাদেশে ১৮৭২ সালের চুক্তি আইন এখনও প্রচলিত আছে। এই আইনের ২(জ) ধারায় চুক্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য সম্মতিই হচ্ছে চুক্তি। সুতরাং যখন একটি সম্মতি আইন দ্বারা বলবৎ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে তখন সেই সম্মতিকে চুক্তি বলা হয় ৷ এখন জানার দরকার কি কি কাজ করতে চুক্তি আইনের দরকার হয়। আমাদের পণ্য, সেবা, সম্পত্তি ইত্যাদি আদান-প্রদানের, আর্থিক লেনদেন, যানবাহনে ভ্রমণ বিশেষ করে ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে চুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এ আইনের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয়তা হল পক্ষগণ যেন তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে অপরপক্ষের অধিকার নিশ্চিত করে। চুক্তির কোন পক্ষ চুক্তির বাধ্যবাধকতা বা কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে চুক্তি আইন তার প্রতিকার করবে। কিন্তু চুক্তি আইনে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন-চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন ও চুক্তি রদ বা বাতিল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সমাধান খুজতে যেতে হয় ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে ।
আবার পণ্য ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিষয় ১৯৩০ সালের পণ্য বিক্রয় আইনে আলোচনা করা হয়েছে। আবার ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে চুক্তির বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। অনেকে জানতে চান কারা চুক্তি করার অযোগ্য। এ সম্পর্কে ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে নাবালক, পাগল এবং প্রচলিত আইন অনুসারে অযোগ্য ব্যক্তি অর্থাৎ দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি এবং সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি । আর মনে রাখবেন অসম্ভব কাজ সম্পাদনের চুক্তি প্রথম থেকেই বাতিল বলে গণ্য হবে। চুক্তি আইনের ৫৬ ধারার ১ম অংশে বলা হয়েছে, যে কাজ প্রকৃতির জন্য করা অসম্ভব সে কাজ করার সম্মতি বাতিল। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আপনাদের মাঝে পরিস্কার হয়ে উঠবে। ধরুণ-রহিম মিয়া এই মর্মে চুক্তি করেন যে করিম মিয়াকে যাদু বিদ্যা বলে ধন আবিষ্কার করে দেবেন। সম্মতিটি বাতিল। কারণ, যাদু বলে ধন আবিষ্কার সম্ভব নয় ।
আর চুক্তি করার পর কোন ঘটনা দ্বারা চুক্তি পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়লে তাকে উত্তরকালীন অসম্ভবতা বলে । একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আপনি একটি অনুষ্ঠান করার জন্য দশ হাজার টাকা দিয়ে হলরুম ভাড়া নিলেন। অনুষ্ঠানের আগের দিন ঘরটি আগুনে পুড়ে গেলো। তাহলে কি হবে? আপনাদের মধ্যকার চুক্তিটির পরিসমাপ্তি ঘটবে। এর জন্য হলরুমের মালিক দায়ী থাকবে না। তবে
কেউ যদি চুক্তি ভঙ্গ করে, তাহলে আপনি কি কি প্রতিকার পেতে পারেন। ১। আপনি ক্ষতিপূরণ আইনগতভাবে আদায় করতে পারেন, ২। চুক্তি রদ বা বাতিল করতে পারেন ৩। চুক্তিটি পালনে বাধ্য করতে পারেন ৪। ওই কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন ৫ । পূণর্বহাল বা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেন, ৬। চুক্তি অনুযায়ী মূল্য প্রদানে বাধ্য করা যায়।
চুক্তিভঙ্গের জন্য এ ছয়টি প্রতিকারের মধ্যে শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণ চুক্তি আইন দ্বারা পরিচালিত। বাকী পাঁচটি প্রতিকার আদালতের সুবিবেচনার উপর নির্ভরশীল এবং বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭৭ এর বিধান দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে।
ধরুণ আপনি একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম রহিম মিয়ার কাছে বিক্রি করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে আপনি তা বিক্রি করতে অস্বীকার করেন। আপনি এ বিষয়ে আদালতে দ্বারস্থ হলে আদালত চিত্রকর্মটি বিক্রয় করে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য আপনাকে বাধ্য করতে পারেন। কারণ এই চিত্রকর্মটি আপনি বিক্রি না করলে রহিম মিয়ার যে ক্ষতি হবে তা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিরুপণ করা সম্ভব না। আর একটি বিষয় আমাদের জেনে রাখা দরকার যে, চুক্তি আইনের ২৫ ধারায় বলা আছে, স্বাভাবিক স্নেহ-প্রীতির ক্ষেত্রে কোনো প্রতিদান ছাড়া নিকট আত্মীয়কে, কোনো কিছু প্রদানের চুক্তি অবশ্যই লিখিত ও নিবন্ধিত হতে হবে। তার মানে নিকট আত্মীয়দের সাথেও লিখিত চুক্তি করা বাঞ্ছনীয়। আবার ঋণ গ্রহণ ও প্রদান উভয় ক্ষেত্রেই তা লিখিত হতে হবে । কোম্পানি আইনানুযায়ী মেমোরান্ডাম অব এসোসিয়েশেন, আটিকেল অব এসোসিয়েশন ও কোম্পানি সম্পাদিত কোনো চুক্তি লিখিত হতে হবে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইনানুযায়ী সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক, লিজ, বিনিময় ও নালিশযোগ্য দাবী হস্তান্তরের চুক্তি অবশ্যই লিখিত হতে হবে। এছাড়াও গ্রন্থস্বত্ব আইনের ৫ ধারা ও শিপিং আইনের ৫৪ ধারা মতে চুক্তিসহ আরো কিছু চুক্তি অবশ্যই লিখিতভাবে সম্পন্ন করতে হবে।