চুক্তি রদের মামলার মাধ্যমে
১। আপনি ক্ষতিপূরণ আইনগতভাবে আদায় করতে পারেন,
২। চুক্তি রদ বা বাতিল করতে পারেন
৩। চুক্তিটি পালনে বাধ্য করতে পারেন
৪ । ওই কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন
৫। পূণর্বহাল বা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেন
৬। চুক্তি অনুযায়ী মূল্য প্রদানে বাধ্য করতে পারেন ।
আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে, চুক্তিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তি চুক্তি বাতিল বা রদ করার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। তবে আদালত চুক্তি বাতিল বা রদের আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নিবেন যে চুক্তিটি বাতিলযোগ্য বা বাদী কর্তৃক বিলোপযোগ্য। যেক্ষেত্রে চুক্তিটি বেআইনী এবং বাদীর চেয়ে বিবাদী অধিকতর দোষী যেক্ষেত্রে আদালত বিক্রয় বা ইজারা চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য ডিক্রী প্রদান করেছেন, কিন্তু ক্রেতা বা ইজারাগ্রহীতা বিক্রেতা বা ইজারাদাতাকে আদালতের নির্দেশ মতো অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৬ ধারা অনুসারে চুক্তির কোন পক্ষকে যদি চুক্তি না হওয়া অবস্থায় পূণরায় প্রতিষ্ঠিত করা না যায় তাহলে আদালত লিখিত চুক্তি ভুলের জন্য রদ করে সেই পক্ষের বিরুদ্ধে ডিক্রী প্রদান করতে পারেন। চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের মামলায় আদালত চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আদেশ প্রদান না করতে পারলে চুক্তি রদ করার ডিক্রী প্রদান করে থাকেন। অনেক সময় চুক্তির অংশবিশেষ রদ করা যায় ।
যেমন-বিক্রয় চুক্তির অংশবিশেষ রদ করা হলে তা গ্রহণযোগ্য। তবে আপনাদের জেনে রাখতে হবে নাবালকের পক্ষে চুক্তি করা হলে নাবালক সাবালক হওয়ার পর চুক্তি বাতিল বা রদ করতে পারে। নৈতিকতা ও জননীতির পরিপন্থী চুক্তি বাতিল হতে পারে, প্রতিদানবিহীন চুক্তি বাতিল হতে পারে, অবৈধ প্রভাব, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণার মাধ্যমে হাসিল করা চুক্তি বাতিল হতে পারে, ভুল করে যে চুক্তি করা হয় তা বাতিল বা রদ করা যায়।
এখন জানার বিষয় হচ্ছে চুক্তি রদের মামলা কে করতে পারে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৫ ধারা অনুসারে যে সকল ব্যক্তিগণ চুক্তি রদ বা বাতিলের মামলা করতে পারে তারা হচ্ছেন-চুক্তির যে কোন পক্ষ চুক্তি রদের মামলা দায়ের করতে পারে। চুক্তিতে স্বার্থ আছে এমন কোন ব্যক্তি চুক্তি রদের মামলা দায়ের করতে পারে। পক্ষগণের উত্তরাধিকারীগণ চুক্তিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে চুক্তি রদের মামলা দায়ের করতে পারে। চুক্তি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন ব্যক্তিও চুক্তি রদের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। যৌথ হিন্দু পরিবারের ম্যানেজার ও তৃতীয়পক্ষের মধ্যে চুক্তি দ্বারা কোন ব্যক্তি প্রতারিত হলে ঐ ব্যক্তি চুক্তি রদের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে ।
এখন জানার বিষয় হচ্ছে-এ মামলা কতদিনের মধ্যে করতে হয়। ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ১১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে চুক্তি রদ বা বাতিলযোগ্য-এই তথ্য জানার ১ বছরের মধ্যে চুক্তি রদ বা বাতিলের জন্য মামলা দায়ের করা যায়। আর সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৬ ধারা অনুসারে ভুলের জন্য লিখিত চুক্তি বাতিলের মামলা করা যায়। ৩৭ ধারায় সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের মামলায় বিকল্প হিসেবে বাতিলের প্রার্থনা চাইতে হবে। আদালত চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আদেশ দিতে অস্বীকার করলে এক্ষেত্রে আদালত চুক্তিটি রদ বা বাতিল করার আদেশ দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাদীকে আরজিতে সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের বিকল্প হিসেবে চুক্তিটি রদ করার প্রার্থনা জানাতে হবে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩৮ ধারায়, চুক্তি রদকারী পক্ষের নিকট থেকে আদালত ন্যায়পরায়ণতার দাবি করতে পারে। অর্থাৎ আদালত যে পক্ষের অনুকূলে চুক্তি রদের প্রতিকার মঞ্জুর করবেন, সেই পক্ষের নিকট থেকে ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত অপরপক্ষকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিবেন। চুক্তি বাতিলের মামলায় আদালত চুক্তি বাতিলের আদেশ দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ২২ ধারা অনুসারে আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা সুষম, যুক্তিযুক্ত এবং বিচার কার্যাবলীর মূলনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা কোন ক্রমেই স্বেচ্ছাচারী হবে না।